হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মোহাম্মাদ শামীম হুসাইন মির্জা
তাওয়াস্সুলের অর্থ হচ্ছে কাউকে মধ্যস্থতা করে মহান আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করা, যার মাধ্যমে দোয়া দ্রুত কাবুল হয়। এই কারণে লাইলাতুল কদরে কোন কোন মুসলমানেরা তাওয়াস্সুলের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।
তাওয়াস্সুল হল একটি মূল ধারণা যা প্রার্থনায় বিবেচনা করা হয় এবং এর মাধ্যমে প্রার্থনার ফলাফল দ্রুত অর্জন করা যায়। তদনুসারে, লাইলাতুল কদরের আমলসমূহের মধ্যে একটি আমল হচ্ছে আহলে বায়েতের (আ.)-এর পবিত্র অবস্থানের শপথ করে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া। তবে এই বিষয়টি কি পবিত্র কুরআন সংগত?
«يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ»
হে বিশ্বাসিগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য (এবং তাওয়াস্সুল লাভের মাধ্যম) অন্বেষণ কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
সূরা মায়েদা, আয়াত ৩৫
তাওয়াস্সুলের আরেকটি অর্থ হল ভালোবেসে এবং আগ্রহসহকারে কোন কিছুর কাছে যাওয়া। সুতরাং, এই আয়াতে "তাওয়াস্সুল বা মাধ্যম" শব্দের একটি বিস্তৃত অর্থ রয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যে কোন কিছু এবং যে কোন কাজ এর অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। যেমন ইমাম আলী (আ.) একটি বর্ণনায় তাওয়াস্সুল যেগুলোর জন্য প্রয়োজন, সেগুলো হলো: "আল্লাহ ও নবীর (সা.) প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহর পথে জিহাদ, কালেমা’য়ে ইখলাস (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), নামাজ, যাকাত, রমজান মাসে রোজা, হজ, আত্মীয়তার সম্পর্ক, প্রকাশ্য ও গোপন দান করা এবং সমস্ত ভাল কাজ।" পবিত্র কুরআনের আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন সালেহ বা পূর্ণবান ব্যক্তিকে মাধ্যম করে অথবা তাওয়াস্সুল করে আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া কোনোভাবেই নিষিদ্ধ নয় এবং এই বিষয়টি তৌহিদ বা একেশ্বরবাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
«قَالُوا يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ:»
তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা! তুমি আমাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আমরা অপরাধী ছিলাম।’
সূরা ইউসুফ, আয়াত ৯৭।
এই আয়াত অনুসারে, অন্যের কাছে তাওয়াস্সুল করা কেবল একেশ্বরবাদের সাথে সাংঘর্ষিকই নয়, বরং এটি ঈশ্বরের অনুগ্রহে পৌঁছানোর একটি উপায়। তা না হলে হযরত ইয়াকুব (আ.) কীভাবে তাঁর সন্তানদের ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেছেন এবং তাদের আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন? এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লহার ওলীদের কাছে তাওযাস্সুল করা জায়েজ এবং এর বিরোধিতা করা পবিত্র কুরানের অজ্ঞতা বা মিথ্যা কুসংস্কারের পরিচায়ক যা কুরানের শিক্ষা থেকে সত্যকে বাধা দেয়।
মানবজাতিকে পথপ্রদর্শনে একজন ধর্মীয় নেতার রোল মডেলের ভূমিকা
তাওয়াস্সুলের উপর জোর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, মুমীনগণ তাদের নেতা এবং পথপ্রদর্শককে পছন্দ করার মধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মনোনিবেশ করবে।
«وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا»
আমরা কোন রাসূলকেই এ উদ্দেশ্য ছাড়া প্রেরণ করিনি যে, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়; এবং (হে রাসূল!) যখন তারা (অবাধ্যতা করে) নিজেদের (আত্মার) প্রতি অবিচার করেছিল, যদি তোমার নিকট আসত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত আর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত, তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অতিশয় ক্ষমাশীল, অনন্ত করুণাময় পেত।
সূরা নিসা, আয়াত ৬৪
এই আয়াতেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.)-এর নিকট যাওয়া এবং তাঁকে আল্লাহর সামনে একজন সুপারিশকারী হিসেবে উপস্থাপন করা এবং তাঁর মধ্যস্থতা ও সুপারিশ পাপীদের জন্য কার্যকর এবং তা খোদায়ী তওবা ও করুণার কবুলের দিকে পরিচালিত করবে। অবশ্যই, এই ধরনের সুপারিশের জন্য প্রয়োজন ভিত্তির অস্তিত্ব এবং পাপীদের নিজেদের মধ্যে যোগ্যতা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন।